কেন পড়বেন নার্সিং এ
উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর আমরা সবাই হতাশ হয়ে পরি কোথায় ভর্তি হব, কোন সাবজেক্ট এ পড়ব সেই দুশ্চিন্তায়। কোন স্থির সিদ্ধান্ত নিতে পারিনা এবং যথারীতি সব বিশ্ববিদ্যালয় এর ফরম কেনা শুরু করি এবং পাগলা ঘোড়ার মত দেশের এই প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত ছুটি পরীক্ষা দিতে। ফলে যা হওয়ার তাই হয়, অল্প সংখ্যক বাদে বাকি সবাই কে ফিরে আসতে হয় খালি হাতে। হতাশা আর বিষণ্য়তায় ডুবে যায় মন, পাবলিক ভার্সিটিতে তো চান্স পাইলাম না বন্ধুদের মুখ দেখাই কি ভাবে, এইকথাগুলো ভেবে সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে ঘরে বসে থাকি। অথচ এই সময় আমাদের শিক্ষার্থীদের সঠিক নির্দেশনা দিলে তারা প্রত্যেকেই তাদের কাক্ষিত সাবজেক্ট এ পড়াশুনা করে এক জন সফল মানুষ হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। আমাদের বেশীর ভাগ লোকই আমরা জানিনা আমরা যে সাবজেক্ট এ পড়তেছি সেই সমপর্কিত চাকরি পাব কি না, কিন্তু এমন কিছু সাবজেক্ট আছে যে বিষয় গুলোতে পড়াশুনা করলে বিশ্বব্যাপী আপনি গ্লোবাল ক্যারিয়ার গড়তে পারবেন। আর সেটা ডিপ্লোমা/ বি এস সি নার্সিং এ পড়ার মাধ্যমে সম্ভব, সর্বোপরি নার্সিং এমন একটি পেশা, যার চাহিদা স্থান,কাল, পাত্রে সীমাবদ্ধ নয়।
মমতাময়ী সেবাই যাদের লক্ষ্য:
বর্তমানে পেশা হিসেবে নার্সিং বেশ জনপ্রিয়। আপনি যদি নার্সিং পড়ার জন্য মনস্থির করে থাকেন তবে আমি বলবো আপনি সময় উপযোগী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। একজন নার্স ডাক্তারের সঙ্গে তাল মিলিয়ে বিভিন্নভাবে চিকিৎসা সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখেন। নার্সরা তাদের যত্ন ও সুন্দর ব্যবহার দিয়ে একজন রোগীকে সুস্থ করে তোলেন। ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী একজন নার্স রোগীর সব দায়িত্ব নিজেই বহন করে থাকেন। রোগীদের ওষুধ খাওয়ান থেকে শুরু করে চিকিৎসার ক্ষেত্রে বিভিন্ন সেবা দিয়ে থাকেন নিষ্ঠার সঙ্গে। রোগীকে খাবার খাওয়ান এবং রোগী যতক্ষন পর্যন্ত হাসপাতালে ভর্তি থাকেন, ঠিক ততক্ষন ই একজন নার্স তার সেবামূলক কর্তব্য পালন করে থাকেন।
পেশাগত মর্যাদা ও কর্মপরিধি:
সরকারি হাসপাতালগুলোতে একজন ডিপ্লোমা নার্স/ মিডওয়াইফ শুরুতেই নন ক্যাডার ২য় শ্রেণীর গেজেটেড কর্মকর্তা হিসেবে পাবলিক সার্ভিস কমিশন এর মাধ্যমে নিয়োগ প্রাপ্ত হন। যাহা বর্তমানে ১০ম গ্রেড ভুক্ত । শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতা বাড়ার সাথে সাথে একজন নার্স নিন্মুক্ত বিষয়ে ক্যারিয়ার গড়তে পারেন।
১. ক্লিনিক্যাল নার্সিং সার্ভিস
২. নার্সিং প্রশাসন ও ব্যাবস্থাপনা
৩. নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণা সার্ভিস
৪. পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নার্সিং
১. ক্লিনিক্যাল নার্সিং সার্ভিস: ক্লিনিক্যাল নার্সিং সার্ভিস এর চাহিদা সারা বিশ্বব্যাপী বিস্তৃত , বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার মতে হাসপাতালে রোগীর সেবার একজন ডাক্তার এর বিপরীতে তিনজন দক্ষ নার্স দরকার। বিশেষ করে ক্রিটিকাল কেয়ার সেকশন যেমন- আই সি ইউ, সি সি ইউ, ওটি, এন আই সি ইউ ইত্যাদি বিভাগ গুলোতে ১ জন রোগির জন্য একজন নার্স দরকার। ক্লিনিক্যাল নার্সিং এ বর্তমানে আমাদের দেশে উল্লেখযোগ্য স্থানগুলো হলঃ
১. ইমারজেন্সি ও ক্রিটিক্যাল কেয়ার নার্স
২. ইনটেনসিভ কেয়ার ( আই সি ইউ) নার্স
৩. ওটি নার্স
৪. কার্ডিয়াক নার্সিং
৫. সাইকিয়াট্রিক নার্সিং
৬. পেডিয়াট্রিক নার্সিং
৭. মেটারন্যাল হেলথ নার্সিং
২. নার্সিং প্রশাসন ও হাসপাতাল ব্যাবস্থাপনা: ক্লিনিক্যাল নার্সিং এর পাশাপাশি সরকারী হাসপাতাল ও সেবা কার্জ্যক্রম ও প্রশাসনিক ব্যাবস্থাপনার জন্য গনপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান মন্ত্রণালয় এর নার্সিং ও মিডওয়াইফারি অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশাসনিক পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। এই পদগুলো সরকারের ১ম শ্রেণীর কর্মকর্তা মানেরঃ
১. মহাপরিচালক
২. পরিচালক (প্রশাসন)
৩. পরিচালক (নার্সিং শিক্ষা)
৪. পরিচালক (মিডওয়াইফারি শিক্ষা )
৫. পরিচালক (শৃঙ্খলা )
৬. উপ-পরিচালক ( প্রশাসন,নার্সিং শিক্ষা , মিডওয়াইফারি শিক্ষা , শৃঙ্খলা )
৭. সহকারী পরিচালক ( প্রশাসন,নার্সিং শিক্ষা , মিডওয়াইফারি শিক্ষা , শৃঙ্খলা )
৮. বিভাগীয় পরিচালক নার্সিং ( ৮ টি বিভাগীয় অফিস)
৯. জেলা পাবলিক হেলথ নার্স ( ৬৪ টি জেলা সিভিল সার্জন অফিসে)
১০. সেবা তত্ত্বাবধায়ক (সকল মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল)
১১. উপ সেবা তত্ত্বাবধায়ক ( সকল স্পেশালাইজড ও সদর হাসপাতাল)
১২. নার্সিং সুপারভাইজর
১৩. ইনচার্জ (সকল বিভাগ)
৩. নার্সিং শিক্ষা ও গবেষণা সার্ভিস: একজন ডিপ্লোমা নার্স ১০ম গ্রেডের নন ক্যাডার কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করার পরে তার শিক্ষাগত যোগ্যতা ও অভিজ্ঞতার আলোকে নার্সিং শিক্ষা সার্ভিস এ জেতে পারেন। সরকারী ভাবে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীন জাতীয় নার্সিং উচ্চ্য শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান , বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ এর সাথে ১১ টি বেসিক বি এস সি নার্সিং কলেজ, ৪ টি পোস্ট বেসিক বি এস সি নার্সিং কলেজ এবং ৪৩ নার্সিং ইন্সটিটিউট এর বিভিন্ন পদে কাজ করার সুযোগ রয়েছে। অনুরুপ ভাবে বেসরকারি নার্সিং কলেজ গুলোতেও নার্সিং শিক্ষা সার্ভিস এ কাজ করার সুযোগ রয়েছে। পদগুলো হল-
১. প্রিন্সিপ্যাল
২. ভাইস-প্রিন্সিপাল
৩. অধ্যাপক- ( বিভিন্ন বেসিক, ক্লিনিক্যাল, এবং প্যারা ক্লিনিক্যাল বিষয়)
৪. সহযোগী অধ্যাপক
৫. সহকারী অধ্যাপক
৬. লেকচারার
৭. ইন্সট্রাকটর
৮. ডেমনেস্ট্রেটর
৪. পাবলিক হেলথ বা জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ নার্সিং: দেশের ৬৪ টি জেলা সিভিল সার্জন অফিসে ১ম শ্রেণীর পদমর্জাদায় পাবলিক হেলথ নার্স হিসেবে কাজ করার সুযোগ রয়েছে।
স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় এর বাইরেও সরকারের বিভিন্ন দপ্তর যেমন- পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এর সুরক্ষা বিভাগ, বাংলাদেশ আর্মি এর অধীন আর্মড ফোর্সেস নার্সিং সার্ভিস এ সরাসরি লেফটেন্যান্ট, সমাজসেবা অধিদপ্তর, পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তর, সহ বিভিন্ন বিভাগে কাজের সুযোগ রয়েছে।
বেসরকারি চাকুরীর ক্ষেত্রেঃ
আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে বিবেচনা করলে দেখা যায়, গত কয়েক বছরে দেশে হাসপাতাল সহ প্রাইভেট হাসপাতাল, ক্লিনিক এবং ডায়গনষ্টিক সেন্টারের সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। চিকিৎস্যা সেবার সাথে সংশ্লিষ্ট এসব প্রতিষ্ঠানে নার্স বা সেবিকাদের চাহিদাও দিনদিন বেড়ে চলেছে। দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এনজিও, গবেষণা প্রতিষ্ঠান, বেসরকারি স্কুল ও কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় , গার্মেন্টস ইন্ডাস্ট্রি, শিল্প কারখানা, এমনকি পর্যটন কর্পোরেশনেও ক্যারিয়ার গড়ার সুযোগ রয়েছে।
উচ্চ্য শিক্ষার সুযোগঃ
বিএসসি ইন নার্সিং তথা নার্সিংয়ের ওপর গ্রাজুয়েশন বা স্নাতক পর্যায়ের পড়ালেখা করার সুযোগ কিছুদিন আগেও আমাদের দেশে ছিল না। এই বিষয়ে কেবল ডিপ্লোমা এবং প্রাইমারি কোর্সই চালু ছিল। তবে বর্তমানে এই বিষয়ে সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে নার্সিংয়ের ওপর ্সনাতক কোর্স চালু হয়েছে । ৩ বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা ইন নার্সিং/ মিডওয়াইফারি কোর্স শেষ করার পরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী, চট্রগ্রাম ও শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় এর অধীন বিভিন্ন সরকারী ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ২ বছর মেয়াদী বি এস সি নার্সিং ডিগ্রী অর্জন করতে পারবেন। পরবর্তিতে দেশে ও বিদেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়এ এম এস সি ইন নার্সিং, এম এস, এম পি এইছ, এম ফিল ও পি এইছ ডি ডিগ্রী অর্জনের সুযোগ রয়েছে।
বিদেশে উচ্চ শিক্ষা , চাকুরী এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস:
আমাদের অনেকেরই ইচ্ছা থাকে পড়াশুনা শেষে বিদেশে উচ্চ শিক্ষা , চাকুরী এবং স্থায়ী ভাবে বসবাস করার। বিশেষ করে আমেরিকা, কানাডা, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, ইউরোপ এবং মধ্যপ্রাচ্যএর কোন দেশে সেটেল হওয়া। আপনার যদি এই রকম প্রচন্ড ইচ্ছা থাকে তবে নিশ্চিন্তে আপনি এই সাবজেক্ট এ ভর্তি হতে পারেন। আপনাকে নির্দ্বিধায় বলতে পারি অন্য যে কোন সাবজেক্ট থেকে এখানে পড়াশুনা করলে আপনাকে চাকুরীর জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতে হবেনা। আর যদি আপনার কেউ বিদেশে চাকুরী করে থাকে তার মাধ্যমে আপনি জেনে নিতে পারেন আমেরিকা, কানাডা বা ইউরোপে একজন গ্রাজুয়েট / ডিপ্লোমা নার্স এর স্যালারি কত হাজার ডলার। এবং কত সহজেই গ্রিন কার্ড পাওয়া যায়।
বাংলাদেশে উচ্চ্য শিক্ষিত বেকারঃ
বাংলাদেশের শ্রম বাজারে মোট শ্রমশক্তির চাহিদার মধ্যে ৩০% প্রয়োজন সাধারণ শিক্ষা য় শিক্ষিত অন্যদিকে ৩৫% প্রয়োজন বিভিন্ন সেক্টরে কারিগরি জ্ঞান স¤পন্ন। অথচ মোট শিক্ষার্থী ৮৫% গ্রহন করছে সাধারণ শিক্ষা এবং মাত্র ১৫% গ্রহন করছে কারিগরি শিক্ষা , আবার সেই ১৫% এর মধ্যে অনেকের রয়েছে শুধু সনদ নির্ভর কারিগরি শিক্ষা ! ফলে চাকুরীর বাজারে উচ্চ শিক্কাষিতের হার ৪৭% !!! দেশের মোট বেকার ৪ কোটিরও বেশি!!!
সিদ্ধান্ত তোমারঃ
কারিগরি শিক্ষা নিলে, শতভাগ কর্ম মেলে। এজন্য বাংলাদেশ সরকার বেকারত্ব দূরীকরণের হাতিয়ার হিসেবে শিক্ষা কে সব থেকে বেশি গুরুত্ব দিয়েছেন এবং তার মধ্যে কারিগরি শিক্ষা কে সবার উপরে রেখেছেন। তবে আপনাকে অর্জন করতে হবে দ¶তা ভিত্তিক কারিগরি শিক্ষা , অর্থাৎ প্রকৃত হাতেকলমে শিক্ষা গ্রহন করতে হবে, সার্টিফিকেট সর্বস্ব নয়। পৃথিবীতে যত মহৎ পেশা আছে নার্সিং তার মধ্যে অন্যতম। বিগত কয়েক দশকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের বিপুল সমপ্রসারনের সাথে নার্সিং পেশাটির বিপুল সমপ্রসারন ঘটেছে। অনেক সময় মধ্যবৃত্ত পরিবারের ছেলেমেয়েদের নার্সিং পড়ার প্রবল আগ্রহ থাকে। সরকারি ভাবে চান্স না পেলে হতাসা গ্রস্থ হয়ে পড়ে। কারন তাদের প¶ে হয়তো বেসরকারিভাবে পড়ার আর্থিক অবস্থা থাকে না। আবার অনেকের ধারনা বেসরকারিভাবে পড়তে অনেক টাকা দরকার। অনেকের ধারনা বেসরকারিভাবে পড়লে সরকারী চাকরি হববে কিনা? আসলে বাংলাদেশ নার্সিং কাউন্সিল অধিভুক্ত যেকোনো কলেজে বা ইনস্টিটিউটে পড়লেই সরকারি চাকরি হবে। সরকারি বেসরকারি কোনো ব্যপার নয়। এবং বেসরকারিভাবে পড়তে বেশি টাকা লাগে না।
মনের যত প্রশ্ন আছে……………
যারা নার্সিং পড়ার সপ্ন দেখো, আমরা তোমাদেরকে সরকারি বেসরকারিভাবে পড়ার ভিবিন্ন তথ্য দিয়ে থাকি। অনেকেই আমাদের মাধ্যমে নার্স হওয়ার পথে রয়েছে। তোমাদের মনে আরো জানার কোন প্রশ্ন থাকলে নিঃসঙ্কোচে আমাদের কাছে ফোন করতে পার/যোগাযোগ করতে পারো।